আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: ইলন মাস্ক: টেসলা থেকে স্পেসএক্স-ভবিষ্যতের মানুষ । ইলন মাস্ক একজন অগ্রণী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, যিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি, মহাকাশ গবেষণা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তার উদ্যোগ টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিঙ্ক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
ইলন মাস্কের শৈশব ও শিক্ষা:
১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ইলন। তাঁর পুরো নাম ইলন রিভ মাস্ক। ছোটবেলা থেকেই প্রোগ্রামিং ও বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। কানাডায় শিক্ষা নিয়ে পরে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স ও অর্থনীতি পড়াশোনা করেন।
ইলন মাস্কের ক্যারিয়ার:
ইলনের প্রথম বড় উদ্যোগ ছিল Zip2, যা পরে বিক্রি করেন। এরপর PayPal প্রতিষ্ঠা করেন যা ই-কমার্সে বড় পরিবর্তন আনে। পরবর্তীতে তিনি টেসলা মোটরস (২০০৩), স্পেসএক্স (২০০২), সোলারসিটি ও নিউরালিঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন।
ইলন মাস্কের প্রযুক্তিতে অবদান
১। Zip2 Corporation (1996):
ইন্টারনেটের শুরুর যুগে ভাই কিম্বাল মাস্কের সঙ্গে Zip2 নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি স্থানীয় ব্যবসার জন্য অনলাইন ডিরেক্টরি ও মানচিত্র সেবা দিত।
২। X.com ও PayPal (1999 – 2002):
তিনি X.com নামে একটি অনলাইন পেমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে PayPal-এ রূপ নেয়। PayPal অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটায়। ২০০২ সালে eBay এটি কিনে নেয়।
৩। SpaceX (2002):
মহাকাশ অভিযানে খরচ কমিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশযাত্রা সম্ভব করতে প্রতিষ্ঠা করেন SpaceX।
❁ ২০০৮: প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে Falcon 1 সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছায়।
❁ ২০১2: Dragon ক্যাপসুল আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছায়।
❁ ২০২০: Crew Dragon দিয়ে নভোচারী পাঠানো হয়।
❁ Starship প্রজেক্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মঙ্গল অভিযানের স্বপ্ন দেখান।
৪। Tesla Inc. (2004-বর্তমান):
তিনি Tesla-তে বিনিয়োগ ও নেতৃত্ব দিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়িকে মূলধারায় নিয়ে আসেন।
❁ ২০০৮: প্রথম EV Tesla Roadster বাজারে আসে।
❁ ২০১২: Model S আসে, যা বিলাসবহুল EV-এর ধারণা দেয়।
❁ ২০২0: Tesla বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি কোম্পানিতে পরিণত হয়।
৫। SolarCity (2006):
টেকসই শক্তির জন্য সৌরশক্তি-ভিত্তিক কোম্পানি SolarCity প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি Tesla Energy-তে একীভূত হয়।
৬। Hyperloop (2013):
ভবিষ্যতের উচ্চ-গতির পরিবহনের জন্য Hyperloop ধারণা দেন — একটি ভ্যাকুয়াম টিউবের মধ্যে চলা ট্রেন যা ঘণ্টায় ৭০০+ মাইল গতিতে চলতে পারবে।
৭। OpenAI (2015):
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিরাপদ ও মানবকল্যাণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে OpenAI প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।
৮। Neuralink (2016):
মানব মস্তিষ্ক ও কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ তৈরি করার জন্য Neuralink চালু করেন। এটি ভবিষ্যতে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেসের পথ খুলে দিতে পারে।
৯। The Boring Company (2016):
ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে ভূগর্ভস্থ টানেল খননের কোম্পানি। Hyperloop ও টানেল প্রজেক্ট বাস্তবায়নে এই কোম্পানি কাজ করছে।
১০। Twitter/X (2022):
৪৪ বিলিয়ন ডলারে Twitter কিনে নেন এবং পরে এর নাম পরিবর্তন করে “X” করেন। এটি একটি অল-ইন-ওয়ান অ্যাপ তৈরির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
১১। স্টারলিংক (Starlink):
স্পেসএক্সের উদ্যোগ, সারা বিশ্বে ইন্টারনেট পৌঁছানোর স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক।
আরও পড়ুন:
❒ বিল গেটস: প্রযুক্তি-দানশীলতা ও মানবতার পথিকৃৎ
❒ স্টিভ জবস: ইনোভেশনের প্রতীক ও অ্যাপলের জনক
❒ অ্যালান ট্যুরিং: কম্পিউটার বিজ্ঞানের নীরব নায়ক
ইলন মাস্কের ব্যক্তি জীবন ও স্বীকৃতি:
এলন মাস্কের ব্যক্তিগত জীবন নানা ওঠা-নামার মধ্যে থেকেছে। তিনবার বিবাহ করেছেন এবং ছয় সন্তান। প্রযুক্তি ও উদ্যোগে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন, যেমন টাইম ম্যাগাজিনের ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি’।
ইলন মাস্কের বর্তমান জীবন
ইলন মাস্ক এখনো টেসলা, স্পেসএক্স ও অন্যান্য প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ ও গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন।
ইলন মাস্ক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার উদ্ভাবন ও উদ্যোগ মানব জাতির উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষায় নতুন দিশা দেখাচ্ছে। ইলন মাস্ক প্রযুক্তি জগতে এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি শুধু উদ্ভাবন করেন না, সেই উদ্ভাবনকে বাস্তবে পরিণত করেন। তার লক্ষ্য শুধু ব্যবসা নয়, মানবজাতির ভবিষ্যৎকেও রূপান্তরিত করা।
❑ টেক হিরোজ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: মার্ক জাকারবার্গ: ফেসবুক দিয়ে বিশ্বকে সংযুক্ত করেছেন যিনি