আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ইন্টারনেট আবিষ্কার এবং বর্তমান যুগে এর গুরুত্ব । ইন্টারনেট, যার উপর ভর করে চলছে পৃথিবী। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ছাড়া যেন এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। সারা বিশ্বে প্রায় ৪.৫৭ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শিক্ষা, যোগাযোগ, ব্যাংকিং, বিনোদন সবকিছুর জন্য ইন্টারনেট প্রধান কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বর্তমানের এই দ্রুতগতির ইন্টারনেট আসার পেছনের ইতিহাস জানা নেই অনেকেরই।
ইন্টারনেট কি?
ইন্টারনেট (Internet) হলো একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক সিস্টেম যা লাখো কম্পিউটার, সার্ভার এবং অন্যান্য ডিভাইসকে একত্রিত করে, যাতে তারা একে অপরের সাথে তথ্য বিনিময় করতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষ তথ্য শেয়ার করতে পারে, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারে, ইমেইল পাঠাতে পারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে, অনলাইন শপিং, শিক্ষা এবং আরও অনেক কিছু করতে পারে।
ইন্টারনেট কবে এবং কিভাবে এলো?
ইন্টারনেটের উৎপত্তি ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স) একটি প্রকল্প শুরু করেছিল যার নাম ছিল ARPANET (Advanced Research Projects Agency Network)। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল একটি এমন নেটওয়ার্ক তৈরি করা যা সেনা ও গবেষকরা সুরক্ষিতভাবে যোগাযোগ করতে পারবেন, বিশেষত যখন একাধিক জায়গায় যুদ্ধ বা বিপদ দেখা দেয়। এটি ছিল প্রথম ধরণের নেটওয়ার্ক যা কম্পিউটারগুলোকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করতে সক্ষম ছিল।
১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ARPANET অন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ১৯৮৩ সালে, ARPANET TCP/IP (Transmission Control Protocol / Internet Protocol) প্রোটোকল গ্রহণ করে, যা বর্তমান ইন্টারনেটের মূল ভিত্তি। এরপর, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৯০-এর দশকের মধ্যে ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়। ১৯৯১ সালে, World Wide Web (WWW) চালু হলে ইন্টারনেট আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইন্টারনেট আবিষ্কারকের কথা
ইন্টারনেটের আবিষ্কারকের কথা বললে, মূলত ইন্টারনেটের প্রযুক্তির বিকাশের পেছনে একাধিক বিজ্ঞানী এবং গবেষকের অবদান রয়েছে। তবে ইন্টারনেটের পিতামহ হিসেবে দুইজন বিজ্ঞানী বিশেষভাবে পরিচিত:
১। ভিন্টন সার্ফ (Vinton Cerf) এবং বব কাহল (Bob Kahn): এই দুই বিজ্ঞানীই ১৯৭০-এর দশকে TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol) প্রোটোকল তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের ভিত্তি। তাঁদের কাজের মাধ্যমেই ইন্টারনেটের তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হয়।
২। টিম বার্নার্স-লি (Tim Berners-Lee): ওয়েব ব্রাউজিং এবং হাইপারটেক্সট সিস্টেমের উদ্ভাবন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি World Wide Web (WWW) তৈরি করেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে ওয়েবসাইট ব্রাউজিং এবং ডকুমেন্ট শেয়ার করার সুযোগ দেয়।
ইন্টারনেটের বিকাশের মূল সময়রেখা
❖ ১৯৬৯: প্রথম ইন্টারনেটের পূর্বসূরি ARPANET চালু হয়, যা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি প্রকল্প ছিল। এটি ছিল কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করার একটি পরীক্ষা।
❖ ১৯৭০-এর দশক: ভিন্টন সার্ফ ও বব কাহল TCP/IP প্রোটোকল তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের ভিত্তি।
❖ ১৯৮৯: টিম বার্নার্স-লি World Wide Web তৈরি করেন।
❖ ১৯৯০-এর দশক: ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি পায় এবং ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।
এভাবে ইন্টারনেট বিকশিত হতে থাকে, এবং আজকের দিন পর্যন্ত এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
১। ১৯৬৯ (ARPANET)
ইন্টারনেটের প্রথম সূচনা হয়েছিল ARPANET নামক একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে, যা ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় চালু হয়েছিল। এটি ছিল মূলত একটি পরীক্ষামূলক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে কম্পিউটারগুলি একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে সক্ষম ছিল। এটি ইন্টারনেটের প্রথম স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেছিল।
২। ১৯৮৯ (World Wide Web – WWW)
টিম বার্নার্স-লি ১৯৮৯ সালে World Wide Web (WWW) উদ্ভাবন করেন, যেটি ছিল একটি হাইপারটেক্সট সিস্টেম যা ওয়েব পেজ ও ব্রাউজিং সুবিধা প্রদান করে। ১৯৮৯ সালে তিনি World Wide Web কনসেপ্টটি তৈরি করেন এবং ১৯৯০ সালে এটি কার্যকরী হয়ে ওঠে।
৩। ১৯৯১ (WWW চালু)
টিম বার্নার্স-লি ১৯৯১ সালে WWW (World Wide Web) প্রকল্পটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন এবং এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েব পেজ ব্রাউজিংয়ের প্রথম সাধারণ সিস্টেম হিসেবে জনপ্রিয় হয়।
সঠিক সময়রেখা:
❖ ১৯৬৯: ARPANET (ইন্টারনেটের প্রাথমিক পর্যায়)
❖ ১৯৮৯: World Wide Web (WWW) এর কনসেপ্ট তৈরি হয়।
❖ ১৯৯১: WWW সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
এভাবে, ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের ভিত্তি তৈরি হলেও ১৯৮৯ সালে WWW কনসেপ্ট আসে, এবং ১৯৯১ সালে এটি জনসাধারণের জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
ইন্টারনেটের ব্যবহার কিভাবে হয়?
ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়, এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় ব্যবহার:
১। ওয়েব ব্রাউজিং: ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারে, যা তথ্য খোঁজা, শপিং, শিক্ষা, বিনোদন এবং অন্যান্য সেবা দেয়।
২। ইমেইল: ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি ইমেইল পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে পারেন। এটি পত্রবাহকের মতো কাজ করে, তবে তা দ্রুত এবং ডিজিটালভাবে।
৩। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডইন ইত্যাদি সাইটের মাধ্যমে আপনি বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, পোস্ট শেয়ার করতে এবং সামাজিক কার্যকলাপে অংশ নিতে পারেন।
৪। অনলাইন শপিং: আপনি বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কিনতে পারেন।
৫। ভিডিও কনফারেন্সিং এবং চ্যাট: স্কাইপ, জুম, গুগল মিট এর মতো অ্যাপের মাধ্যমে আপনি দূরবর্তী ব্যক্তিদের সঙ্গে ভিডিও কল করতে এবং আলোচনা করতে পারেন।
৬। গেমিং: ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন গেম খেলা এবং বিভিন্ন গেমিং কমিউনিটির অংশ হওয়া।
৭। অনলাইন শিক্ষা: বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আপনি শিক্ষার বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন।
৮। ডাউনলোড এবং আপলোড: আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড এবং আপলোড করতে পারেন, যেমন সফটওয়্যার, ভিডিও, ডকুমেন্ট ইত্যাদি।
ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা
❖ তথ্য বিনিময়: ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী তথ্য শেয়ার করতে সাহায্য করে, যা দ্রুত এবং সহজ।
❖ যোগাযোগ: এটি দূরত্ব হ্রাস করে, যেকোনো স্থানে দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব।
❖ শিক্ষা: অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে যে কেউ যে কোনো জায়গা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
❖ ব্যবসা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসা সহজে করা যায়, অনলাইন শপিং, মার্কেটিং, ই-কমার্স ইত্যাদি মাধ্যমে।
আরও পড়ুনঃ
❒ টেলিভিশন আবিষ্কারের ইতিহাস এবং এটি কিভাবে কাজ করে
❒ সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যার আবিষ্কার ‘এম১৩৬২৭৯৮৪১’
❒ টয়লেট টিস্যু আবিষ্কার হলো কিভাবে
❒ বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম ভাসমান ট্রেনের আবিস্কারক
❒ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং: অ্যান্টিবায়োটিকের মহানায়ক
❒ ফিঙ্গারপ্রিন্টের আবিষ্কারক বাংলাদেশী আজিজুল হক
অসুবিধা
❖ নিরাপত্তা ঝুঁকি: হ্যাকিং, ডেটা চুরি এবং অনলাইন প্রতারণা ইন্টারনেটে একটি বড় সমস্যা।
❖ সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা: অনেকেই অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে কাটান, যা জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
❖ মিথ্যা তথ্য: ইন্টারনেটে অনেক মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া যায়, যা মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।
ইন্টারনেট আজকের যুগে আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে এবং আমরা যে কোনো মুহূর্তে, যেকোনো জায়গায় তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারি। তবে এর সুবিধা গ্রহণ করতে হলে নিরাপত্তা এবং সচেতনতার দিকে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
❑ আবিষ্কার ও আবিষ্কারক থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ইতিহাস সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ