আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: আল্লাহর কাছে শয়তানের ৪ আবেদন । শয়তান মানুষের সরাসরি দুশমন। শয়তান অর্থ বিতাড়িত, বিদূরিত, বঞ্চিত ইত্যাদি। হক থেকে বিদূরিত এবং কল্যাণ থেকে বঞ্চিত বলে তাকে শয়তান বলা হয়। আল্লাহর বান্দাদের বিপথগামী করতে সে বদ্ধপরিকর। ধোঁকা ও প্ররোচনার নতুন নতুন ফাঁদে মানুষকে আটকানোর চেষ্টা করে শয়তান।
আল্লাহ তাআলা যখন শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেন তখন সে চারটি বিষয়ের আবেদন করে। তার প্রত্যেকটি আবেদন কবুল করা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী- ‘ইবলিস বলল, আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত সুযোগ দিন, আল্লাহ তাআলা বললেন, তুমি সুযোগপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আরাফ: ১৫)
আল্লাহ তাআলার কাছে শয়তানের আবেদনগুলো হলো—
১) আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত জীবন দান করুন। আল্লাহ তার এ প্রার্থনা কবুল করেন।
২) আমার জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ আবেদনও কবুল করা হয়।
৩) আমাকে মানুষের দৃষ্টিশক্তির অন্তরাল হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটিও কবুল করা হয়।
৪) আমি যেন মানবদেহের শিরা-উপশিরায় চলাচল করতে পারি। এ দোয়াও কবুল করা হয়।
মহানবী (স.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান আদমসন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি: ১২৮৮; সহিহ মুসলিম: ২১৭৪)
আরও পড়ুনঃ বদমেজাজ জাহান্নামি মানুষের লক্ষণ
শয়তানের চ্যালেঞ্জ ও আল্লার উত্তর
শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল। সে প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (ইবলিস) বলল, হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব। আপনার মনোনীত বান্দারা ছাড়া (তাদের কোনো ক্ষতি আমি করতে পারব না)।’ (সুরা হিজর: ৩৯-৪০)
আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বলেন, ‘অবশ্যই যারা আমার বান্দা, তাদের ওপর তোমার কোনো ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে, তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম।’ (সুরা হিজর: ৪৩-৪৪)
শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল
শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার বিভিন্ন আমল কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—
১) তাউজ পড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা: আল্লাহ বলেন, ‘যখন কোরআন পাঠ করো তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো (আউজুবিল্লাহ পাঠ করো)।’ (সুরা নাহল: ৯৮)
একইভাবে সুবহানাল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ, আল্লাহ আকবর, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি পাঠের কথাও এসেছে।
২) কাজেকর্মে সতর্কতা অবলম্বন: মহানবী (স.) বলেন, ‘সন্ধ্যায় তোমরা তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখবে। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। ..আল্লাহর নাম স্মরণ করে ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে রাখ। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না..।’ (সহিহ বুখারি: ৩২৮০, ৩৩০৪, ৩৩১৬)
৩) ভালো প্রবণতাকে প্রাধান্য দেওয়া: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আদমসন্তানের ওপর শয়তানের একটি প্রভাব আছে। অনুরূপ ফেরেশতারও একটি প্রভাব আছে। শয়তানের প্রভাব হলো, অকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। আর ফেরেশতার প্রভাব হলো, কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি কল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে সে যেন জেনে রাখে, এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়েছে। কাজেই তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা করা। আর যে ব্যক্তি অকল্যাণের অবস্থা উপলব্ধি করে, সে যেন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (স.) এ আয়াত পাঠ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার প্রতি নির্দেশ দেয়।’ (সুরা বাকারা: ২৬৮; সুনানে তিরমিজি)
৪) নামাজে মনোযোগ সৃষ্টি: হজরত উসমান বিন আবিল আস (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, শয়তান আমার নামাজ ও কেরাতের মাঝে এসে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং আমার মনে সংশয় সৃষ্টি করে। অতঃপর নবী কারিম (স.) বললেন, এটি খিনজাব নামক শয়তানের কাজ। যখন তুমি এর প্রভাব অনুভব করবে, তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে এবং বামদিকে তিনবার থুথু ফেলবে। আমি তাই করলাম এবং আল্লাহ তাআলা তাকে আমার থেকে বিতাড়িত করলেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২২০৩)
আরও পড়ুনঃ গুনাহ মাফের ২৩ আমল
৫) শয়তানের যাবতীয় অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে নবী করিম (স.) বিভিন্ন আমল ও দোয়া শিখিয়েছেন। একটি দোয়া হলো- لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদির। অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সহিহ বুখারি: ৩২৯৩)
আরেকটি কার্যকরী দোয়া হলো—أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ‘আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বিওয়াজহিল কারিম ওয়া সুলত্বানিহিল কাদিমি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’ অর্থ: ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে; তাঁর মহানুভব চেহারার কাছে; তাঁর অনাদি-অনন্ত কর্তৃত্বের কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, নাসয়ি, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মুসনাদে আহমদ, বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত আমলের মাধ্যমে শয়তানের প্রভাব, প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আরও পড়ুনঃ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কখন কেন পড়বেন?