আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: আল্লাহর কতজন নবীকে হত্যা করেছিল বনি ইসরাইল । আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর ছেলে ইসহাক (আ.) নবী ছিলেন। ইসহাকের (আ.) ছেলে ইয়াকুব (আ.)-ও নবী ছিলেন। তার আরেক নাম ছিল ইসরাইল। তার বংশধররা বনি ইসরাইল নামে পরিচিতি লাভ করেছে ইতিহাসে। এ শাখারই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর এক পুত্রের নাম ছিল ইয়াহুদা। সেই নামের অংশবিশেষ থেকে ‘ইহুদি’ নামকরণ করা হয়েছিল। (তাফসিরে মাওয়ারদি: ১/১৩১)
আরও পড়ুনঃ রাসূল (সা.) এর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে বনি ইসরাইল বা ইহুদি কর্তৃক নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। ইহুদিদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও লানতের অন্যতম কারণ এটি। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেছেন- ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الذِّلَّۃُ اَیۡنَ مَا ثُقِفُوۡۤا اِلَّا بِحَبۡلٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ حَبۡلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الۡمَسۡکَنَۃُ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقۡتُلُوۡنَ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ ؕ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوۡا وَّ کَانُوۡا یَعۡتَدُوۡنَ ‘আল্লাহর অনুকম্পা ও মানুষের আশ্রয় ছাড়া যেখানেই তারা অবস্থান করুক, সেখানেই তারা হয়েছে লাঞ্ছিত, তারা আল্লাহর ক্রোধে পরিবেষ্টিত এবং তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দারিদ্রের কশাঘাত। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখ্যান করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত, এটা এজন্য যে, তারা অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করত।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১২)
বনি ইসরাইলের পাপাচারীদের হাতে নিহত নবীদের সংখ্যা যে একেবারে কম ছিল না, তা বোঝা যায় এ আয়াত থেকে- وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ وَ قَفَّیۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهٖ بِالرُّسُلِ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدۡنٰهُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ اَفَکُلَّمَا جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَهۡوٰۤی اَنۡفُسُکُمُ اسۡتَکۡبَرۡتُمۡ فَفَرِیۡقًا کَذَّبۡتُمۡ ۫ وَ فَرِیۡقًا تَقۡتُلُوۡنَ ‘আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে ক্রমান্বয়ে রাসুলদের প্রেরণ করেছি, মরিয়ম পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছি। যখনই কোনো রাসুল এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের পছন্দ নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ এবং একদল নবীকে তোমরা অস্বীকার করেছ, একদল নবীকে হত্যা করেছ।’ (সুরা বাকারা: ৮৭)
কোরআনের বর্ণনায় ইহুদিরা নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী জাতি। (সুরা বাকারা: ৬১) নবীগণ তাদের সতর্ক করলে তারা ওই নবীদের হত্যা করতে থাকে। (তাফসিরে বয়ানুল কোরআন: ২/৩৬৭-৩৬৮) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, বনি ইসরাইল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম: ১/১২৬)
নবী-রাসুল ছাড়াও তারা বহু ধর্মপ্রচারককে হত্যা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তারা তাদেরকে হত্যা করে।’ (সুরা আলে ইমরান: ২১)
তবে তাদের হাতে নিহত নবী কারা ছিলেন সে সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কাজি নাসিরুদ্দিন বায়জাবি (রহ.) তার তাফসিরগ্রন্থে লিখেছেন, ইহুদিদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার উল্লেখযোগ্য তিন জন নবী হলেন, আশইয়া (আ.), জাকারিয়া (আ.) এবং তার ছেলে ইয়াহিয়া (আ.)।
প্রখ্যাত তাবেয়ি উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা.) বলেছেন, আল্লাহর নবী ইয়াহিয়া (আ.)-কে হত্যা করা হয়েছিল এক ব্যভিচারী নারীর প্ররোচনায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা) ইবনে কাসির (রহ.) আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া কিতাবে লিখেছেন, দামেশকের এক বাদশাহ তার একজন মাহরাম আত্মীয়াকে বিয়ে করতে চাচ্ছিল। ইয়াহিয়া (আ.) এ বিয়েতে নিষেধ করেছিলেন। পরে ওই নারীর প্ররোচনায় ইয়াহিয়া (আ.)-কে বাদশাহ হত্যা করে।
আরও পড়ুনঃ বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি