আয়াতুল কুরসির বিস্ময়কর ফজিলত । আয়াতুল কুরসি পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। মুমিনের কর্তব্য, এই পবিত্র আয়াতকে প্রতিদিনের নিয়মিত আমল বানিয়ে নেওয়া।
প্রসিদ্ধ এই আয়াতে মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে। আয়াতটিতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে। কোরআনের চূড়া সুরা বাকারা। তাতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের অন্য আয়াতের ‘নেতা’। সেটা হলো আয়াতুল কুরসি।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩১১৯)
হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারি- বিভিন্ন সময় আয়াতুল কুরসি পড়ার বিশেষ বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সহজে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম
আয়াতুল কুরসির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হলো—প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিয়মিত পড়া। এটি সুন্নত পদ্ধতি। আবু উমামা (রা.) করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনও অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান: ২৩৯৫; নাসায়ি: ৯৪৪৮, তাবারানি: ৭৮৩২)
আরও পড়ুনঃ যেভাবে বুঝবেন আপনি অহংকারী
আল্লাহর হেফাজতে থাকার উপায়
পার্থিব নিরাপত্তায় এই আয়াতে কারিমার বিশেষত্ব আছে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সকাল-সন্ধ্যায় একবার আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে পাঠকারী সারা দিন-রাত শয়তানের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকবে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করবে সে এর মাধ্যমে সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহর) হেফাজতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা তেলাওয়াত করবে সে এর মাধ্যমে সকাল পর্যন্ত (আল্লাহর) হেফাজতে থাকবে। (তিরমিজি: ২৮৭৯)। কেউ রাতে নিদ্রায় যাওয়ার সময় পড়লে শয়তান তার নিকটবর্তী হবে না। (বুখারি: ২৩১১)
শয়তান কাছে ঘেঁষতে পারবে না
আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে একটি সুন্দর ঘটনা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটিতে এক শয়তানের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যেখানে শয়তান বন্দী হওয়ার ভয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে আল্লাহ তাআলা পাহারাদার নিযুক্ত করেন, যিনি সঙ্গে থাকেন। আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত কাছে আসতে পারে না। (দ্র: সহিহ বুখারি: ২৩১১)
উল্লেখিত হাদিসগুলোর আলোকে প্রতিদিন আটবার আয়াতুল কুরসি পাঠ করার নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে- ১. সকাল-সন্ধ্যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর ও শোওয়ার সময়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেউ যদি এই মোবারক আয়াতের অর্থ-মর্ম স্মরণ রেখে উপলব্ধির সাথে তা পাঠ করে তাহলে তা তার জন্য অত্যন্ত বরকতের বিষয় হবে। কেননা আয়াতুল কুরসিতে এমন বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, যার অর্থ জানা মুমিন হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে আয়াতুল কুরসি আরবিতে, উচ্চারণ ও অর্থসহ উল্লেখ করা হলো।
আয়াতুল কুরসি (আরবিতে)
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুজুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।
আয়াতুল কুরসির অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর, সকাল-সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর সময় নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুনঃ গোপন দান আল্লাহর অধিক পছন্দনীয়