আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে । ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য প্রমিত নিরীক্ষণপদ্ধতি ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম বা আইইএলটিএস। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ে এই পরীক্ষা অনেক জনপ্রিয়।
ভিনদেশে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির আবেদনে পূর্বশর্ত হিসেবে আইইএলটিএস স্কোরের কথা উল্লেখ করা থাকে। স্পিকিং (বলা), লিসেনিং (শোনা), রাইটিং (লেখা) ও রিডিং (পড়া)—এ চার অংশ মিলিয়ে নেওয়া হয় আইইএলটিএস পরীক্ষা।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা, চাকরিসহ নানা কারণে অভিবাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে উত্তীর্ণ হতে হয় এই পরীক্ষায়। ইংরেজিভাষী দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ভাষার দেশগুলোও আইইএলটিএস স্কোরকে গুরুত্ব দেয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রেও মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে এই যোগ্যতাকে। চলুন জেনে নিই, কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যে ১০ দেশে অল্প খরচে পড়ার সুযোগ
নিবন্ধনের জন্য যা জানা জরুরি
বাংলাদেশে আইইএলটিএসের পরীক্ষা নিয়ে থাকে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এডুকেশন। দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরেই এই প্রতিষ্ঠান দুটির একাধিক কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোয় সশরীর নিবন্ধন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়।
প্রতি মাসেই পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট তারিখগুলোয় অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন মডিউলের পরীক্ষা। মূলত একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং (জিটি)—এই দুই ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন নেওয়া হয়ে থাকে। যদি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়, তাহলে ক্যাটাগরি হবে একাডেমিক। আর চাকরি বা অন্য কারণে অভিবাসনপ্রার্থীদের জিটি নির্বাচন করতে হবে।
পরীক্ষা কম্পিউটারে অথবা সরাসরি কাগজে (চিরাচরিত পরীক্ষাপদ্ধতি) দেওয়া যায়। কম্পিউটার বেজড টেস্টের ক্ষেত্রে স্কোর পেতে সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ দিন। অপর দিকে, পেপার বেজড টেস্টের ফলাফল আসতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও বৈধ পাসপোর্ট ছাড়া আর কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। কম্পিউটার বা কাগুজে এবং একাডেমিক বা জেনারেল; সব ক্ষেত্রে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য বর্তমান নিবন্ধন ফি ২২ হাজার ৫০০ টাকা।
ধাপে ধাপে আইইএলটিএস পরীক্ষার নিবন্ধনপদ্ধতি
ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস নিবন্ধন: টেস্ট টেকার পোর্টালে অ্যাকাউন্ট তৈরিতে শুরুতেই- লিংকে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ওয়েবসাইটের এই অংশের নাম টেস্ট টেকার পোর্টাল। এখানে প্রয়োজন হবে প্রার্থীর নাম, জন্মতারিখ আর একটি ই-মেইল ঠিকানা। অতঃপর একটি অনন্য পাসওয়ার্ড দিয়ে এবং নিবন্ধনের শর্তাবলিতে সম্মতিসূচক টিক চিহ্ন দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে অ্যাকাউন্ট তৈরির কাজ।
এ পোর্টালে অ্যাকাউন্ট করার সুবিধা হলো, পুরো নিবন্ধন একবারে না করে প্রার্থী প্রয়োজনমতো বিরতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে পারবেন। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে আইইএলটিএস স্কোর চেক করা ও উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় টিআরএফ (টেস্ট রিপোর্ট ফরম) পাঠানো যাবে এই পোর্টালের মাধ্যমে।
টেস্ট ক্যাটাগরি নির্বাচন
লগইনের পর স্ক্রিনের ওপরের বাম কোণে ‘বুক নিউ টেস্ট’-এ ক্লিক করতে হবে। এরপর আসবে টেস্ট ক্যাটাগরি নির্বাচনের পালা। একাডেমিক বা জেনারেল ট্রেনিং থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। পরের ধাপে দেশ ও বিভাগ নির্বাচনের পর ফরম্যাট হিসেবে কাগুজে বা কম্পিউটার বেজড যেকোনো একটি বাছাই করতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে অ্যাক্সেসিবিলিটি রিকোয়ারমেন্ট বিকল্প। এই ক্যাটাগরিতে তাঁদের জন্য স্ক্রাইব, সহায়ক প্রযুক্তি, পরিবর্তিত শ্রবণ সিডি, শ্রবণপ্রতিবন্ধী সংস্করণ বা পরীক্ষার স্থানে শ্রবণসহায়ক ডিভাইস বহন করার সুযোগ থাকে।
বিভিন্ন মডিউলের টেস্টগুলো দেখার জন্য প্রথমে কাঙ্ক্ষিত তারিখ বেছে নিতে হবে। বাছাই করা তারিখে ভেন্যু, নিবন্ধন ফিসহ দিনের বিভিন্ন সময়ের টেস্টগুলো দেখা যাবে। এগুলোর মধ্য থেকে পছন্দসই সময় ও ভেন্যু অনুযায়ী ‘বুক টেস্ট’-এ ক্লিক করে টেস্ট বাছাই করা যাবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সরবরাহ
পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদনের এই মূল ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এখানে মাতৃভাষা ও পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য যোগ করতে হয়। অতঃপর সংযুক্তি হিসেবে আপলোডের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে পাসপোর্ট বা এনআইডি কার্ডের স্ক্যান কপি। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ যদি কাছাকাছি থাকে, তবে আইইএলটিএসে নিবন্ধনের আগেই নবায়ন করে নেওয়া আবশ্যক।
রিভিউ সেকশন
এ পর্যায়ে পরীক্ষার তারিখ, পাসপোর্ট ও ব্যক্তিগত তথ্য সূক্ষ্মভাবে যাচাই করতে হয়। কোনো ভুল হলে এটিই সংশোধন করার সঠিক ধাপ।
নিবন্ধন ফি পরিশোধ
এখানে প্রার্থী তাৎক্ষণিকভাবে কিংবা পরবর্তী অন্য যেকোনো সময় ফি পরিশোধ করতে পারেন। ঘরে বসেই ফি পরিশোধের জন্য রয়েছে কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম। এগুলোর মধ্য থেকে সুবিধাজনক উপায়টি নির্বাচন করে তার যাবতীয় বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। ফি সফলভাবে পরিশোধ করা হলে প্রার্থীর ই-মেইল ঠিকানায় ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে একটি নিশ্চিতকরণ ই-মেইল পাঠানো হবে।
আইডিপিতে আইইএলটিএস নিবন্ধন
অ্যাকাউন্ট তৈরি: আইডিপির ক্ষেত্রে প্রথমে লিংকে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। অনলাইনে যেকোনো সাধারণ অ্যাকাউন্ট খোলার মতোই এখানেও নাম, জন্মতারিখ, ই-মেইল ঠিকানা ও পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুনঃ পাঁচ দেশ হতে পারে গন্তব্য পড়াশোনার সঙ্গে কাজের সুযোগ
পরীক্ষার ধরন ও তারিখ নির্ধারণ
ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইনের পর লিংক থেকে যেতে হবে স্ক্রিনের ওপরে ডান দিকের ‘বুক নাউ’ অপশনে। এর মাধ্যমে শুরু হবে আইইএলটিএস সেশন খোঁজার জন্য প্রাথমিক প্রক্রিয়া, যেটি চারটি সাবসেকশন নিয়ে গঠিত।
প্রথমে টাইপ সাবসেকশন থেকে একাডেমিক বা জিটি থেকে যেকোনো একটি নির্বাচন করতে হবে। তারপরের স্ক্রিনটি হচ্ছে টেস্ট ফরম্যাটের, যেখানে কাগুজে বা কম্পিউটার টেস্ট থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। এরপরের স্ক্রিনে ড্রপ ডাউন লিস্ট থেকে দেশ ও শহরের নাম ঠিক করে দিতে হবে। সব শেষের স্ক্রিনে টেস্ট ডেট বাছাইয়ের পর যেতে হবে ‘ফাইন্ড সেশন’-এ।
নির্দিষ্ট ভেন্যুতে আইইএলটিএস সেশন নির্বাচন
‘ফাইন্ড সেশন’ অপশনটি বাছাই করা তারিখের ভেন্যুসহ বিভিন্ন সময়ের টেস্টগুলো দেখাবে। সেখান থেকে উপযুক্ত সেশনটিতে ক্লিক করার পর শুরু হবে নিবন্ধনের চূড়ান্ত পর্যায়। এটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত: সিলেক্ট টেস্ট ডেট, অ্যাকাউন্ট, রিভিউ, কমপ্লিট পেমেন্ট ও ফাইনালাইজ বুকিং।
পরীক্ষার সময় নির্ধারণ
মূল সেশন লিস্টে তারিখ, সময় ও ভেন্যু সবই উল্লেখ করা থাকে। সিলেক্ট টেস্ট ডেট সাবসেকশনটিতে পৃথকভাবে শুধু সময় পরিবর্তনের সুযোগ থাকে।
অ্যাকাউন্ট ও রিভিউ
এ অংশে ব্যক্তিগত বিবরণ ও পাসপোর্টের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হয়। রিভিউ অংশে এতক্ষণ পর্যন্ত সরবরাহ করা যাবতীয় তথ্য আবার একনজরে প্রদর্শিত হয়। এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করা যায়।
পরীক্ষার ফি পরিশোধ
নিবন্ধনের শেষ সেকশনটি অনলাইন পরিশোধের জন্য। এর মাধ্যমে একটি পরীক্ষা চূড়ান্ত করা হয়। ফি সফলভাবে পরিশোধের ভিত্তিতে পরীক্ষার যাবতীয় তথ্যসহ একটি ই-মেইল প্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শেষ হয়।
এই পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো আইইএলটিএস পরীক্ষার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহজ ও সাবলীলতা নিশ্চিত করে। তবে নিবন্ধন করার আগে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি যথাযথ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে নেওয়া উচিত। এতে করে সেই লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে পরীক্ষার দিনক্ষণগুলো ঠিক করা যাবে।
তার মধ্যে সর্বপ্রথম পাসপোর্টের বৈধতা নিশ্চিত করে নেয়া জরুরি। পরীক্ষার কেন্দ্র ও সময় একবার নির্ধারণের পর প্রয়োজনে তা সম্পাদনের সুযোগ রয়েছে। তবে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রস্তুতি অনুযায়ী পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত স্কোর অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
তথ্যসূত্র: ইউএনবি
🔰 শিক্ষাঙ্গন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ বিসিএস প্রিলিমিনারির বুক লিস্ট