আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: অ্যান্টার্কটিকা অভিযানের সময় বিরল প্রজাতির তিমির সন্ধান । সম্প্রতি অ্যান্টার্কটিকা অভিযানের সময় বিরল প্রজাতির এক তিমির সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, ‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি’ নামে পরিচিত একটি বিরল প্রজাতির তিমি এটি।
এ অভিযানটি ছিল ‘ওয়াগেনিনজেন মেরিন রিসার্চ’ ও তাদের অংশীদারদের সমন্বয়ে করা একটি গবেষণার অংশ। তারা মূলত সমুদ্রের বরফ ও দক্ষিণ মহাসাগরের খাদ্যজালের মধ্যে সম্পর্ক খতিয়ে দেখছেন।
খাদ্যজালের বিভিন্ন উপাদানে নজর দেওয়া হয়েছে এ গবেষণাটিতে, যার মধ্যে আছে সামুদ্রিক পাখি ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো শীর্ষ শিকারী প্রাণীও।
এ অভিযানটি চালানো হয়েছে ২০২২ সালে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের এক শরতকালে জার্মানির বরফভাঙ্গা জাহাজ ‘পোলারস্টার্ন-এ করে। এ এলাকার প্রাণীদের সংখ্যা ও বন্টণ দেখার জন্য গবেষকরা দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
আরও পড়ুনঃ অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে বিশাল ভূখণ্ড খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
প্রথমত জাহাজটি যাত্রা শুরু করার সময় ‘রয়্যাল নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর সি রিসার্চ (এনআইওজেড)’-এর ব্রাম ফেইজ ও ‘ওয়াগেনিনজেন মেরিন রিসার্চ’-এর সুজান কুহনের মতো পর্যবেক্ষকরা জাহাজের ছাদে ‘পর্যবেক্ষণ পোস্ট’ থেকে পাখি ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী গণনা করেন।
দ্বিতীয়ত, জাহাজটি স্থির থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত গণনার জন্য একটি হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে গবেষণা দলটি। এই হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময় গবেষকরা তিনবার ‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি’ প্রজাতির একটি দল দেখতে পান।
এ বিষয়টি রোমাঞ্চকর ছিল, কারণ ১৯৮৮ ও ২০১৮ সালের মধ্যে ১১টি পোলারস্টার্ন অভিযানে এই প্রজাতির তিমি একবারও দেখা যায়নি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এই বিরল দৃশ্যের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘মেরিন ম্যামাল সায়েন্স জার্নাল’-এ।
‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি’ এমন একটি প্রজাতির তিমি, যার দেখা খুব কমই মেলে। তাই এটি সম্পর্কে খুব কম জানেন গবেষকরা। এই প্রজাতিটিকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য সাহিত্য, ইন্টারনেট ও সহকর্মী গবেষকদের কাছ থেকে ‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি’র প্রাপ্ত সব ধরনের তথ্য খতিয়ে দেখেন তারা।
এ গবেষণার সময় ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের বিভিন্ন পুরানো স্লাইড ও ভিডিও খুঁজে পান তারা, যা ‘ওয়াগেনিনজেন মেরিন রিসার্চ’ ও জার্মানির ‘আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট’-এর সহকর্মীরা তৈরি করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীতে আবারও সব প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে
আন্তর্জাতিক তিমি গবেষণা প্রোগ্রামের তথ্যের সঙ্গে এই তথ্যটি যুক্ত করে গবেষণা দলটি মোট ১০৮টি স্থান শনাক্ত করেছে, যেখানে এক হাজার একশ ২৫টি ‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি’ রয়েছে।
‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি’ আকারে দীর্ঘ ও এরা সমুদ্রের গভীরে বাস করে। তাই পানির পৃষ্ঠে এদের উপস্থিত খুব কম হওয়ায় এদের সহজে দেখা যায় না। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সংগৃহীত তথ্য তিমির বন্টণ ও আবাসস্থল সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে।
আগে ধারণা ছিল, ‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি মূলত দক্ষিণ গোলার্ধের মহাসাগরের গভীর অংশে বাস করে। তবে নতুন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, বেশিরভাগ ‘আর্নক্সের ঠোঁটওয়ালা তিমি’র দেখা মিলেছে উপকূলের কাছাকাছি অর্থাৎ অগভীর পানিতে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, তিমি ও সমুদ্রের বরফের মধ্যে একটি সংযোগ আছে। সম্ভবত এদের খাদ্য বা সুরক্ষার জন্য এমনটি হয়ে থাকে। এছাড়া সারা বছর ধরে ঘুরে দেখা মিলেছে, শীতকালে বরফ ছাড়া উত্তরের পানিতে এইসব তিমি কখনও ভেসে যায় না, এমনটি আগে একবার দাবি করা হয়েছিল।
পরিবেশ বিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে মরে যাওয়ার ভান করে কিছু প্রাণী