আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জ । চারপাশে পানিদ্বারা পরিবেষ্টিত একটি বিশাল জলাভূমি হল অষ্টগ্রাম হাওর যেখানে দ্বীপের মত কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। এখানে আসলে কিছু মাছ ধরার নৌকা এবং হাওড়ে অবস্থিত গ্রামগুলোই আপনার চোখে পরবে। বর্ষাকাল এখানে বেড়াতে আসার সবচেয়ে ভাল সময়।
অষ্টগ্রাম হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ হতে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার অবস্থান। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হতে অষ্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬০ কি: মি:। বিখ্যাত হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার পাশেই এর অবস্থান। কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এর পুরোটা, নিকলী, তাড়াইলও করিমগঞ্জের কিছু অংশ, নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ী, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের কিছু এলাকাজুড়ে এই হাওর বিস্তৃত। বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে মহাসাগরের রুপ নেয়। একটানা সাড়ে ৩ ঘন্টা জলপথ পাড়ি দেয়ে দারুন সব সৌন্দর্য-মণ্ডিত জলবেষ্টিত এ জনপদটি।
বর্ষাকালে অষ্টগ্রাম হাওর (Astagram Haor) এ নৌকা ভাসালে মনে হয় অকুল দরিয়া পার হতে যাচ্ছে। কুল নাই কিনার নাই শুধু অশান্ত ঊর্মিমালা উঠানামা করছে বিরামহীন ভাবে। সকালে যখন রক্তলাল সূর্যের উদয় ঘটে তখন মনে হয় ঢেউয়ের ছন্দ দোলায় রক্তিম সূর্য একবার পানির নিচে ডুবছে আবার ভেসে উঠছে। অতি প্রত্যুষে দিগন্ত বিস্তৃত নিস্তব্ধ জলরাশি ভেদ করে চারিদিকে অয়াবীর ছড়িয়ে সূর্য যখন স্বেচ্ছায় তার তেজ সংবরন করে পুর্বদিক থেকে একটি বড় লাল গোলাকৃতি বলের মত লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে থাকে তখন সে দৃশ্য বড়ই চিত্তাকর্ষক।
নৌকাবাইচ
কিশোরগঞ্জের (Kishoreganj) নিকলীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে উপজেলা সদরসহ পুরো হাওরবাসীর মাঝে থাকে ঊৎসবের আমেজ। ছন্দের তালে তালে মাঝিদের দাড় বেয়ে নৌকা এগিয়ে নেয়ার দৃশ্য উপভোগ করে শিশু, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কয়েক লাখ মানুষ। নিকলী ও আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিপুলসংখ্যক লোকজন নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সোয়াইজনী নদীর পাড়ে এসে ভিড় জমায়।
আরও পড়ুনঃ সোনাদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার
অষ্টগ্রাম (Austagram) নেমে বাজারের বাবুলের রেষ্টুরেন্ট এ খাবার খেয়ে চলে যাবেন কুতুব শাহ মসজিদ দেখতে। চারদিকে হাওর বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা অষ্টগ্রামে রয়েছে ৪০০ বছরের পুরুনো কুতুবশাহ মসজিদ। গেলে অবশ্যই দেখে আসবেন সেটা। কিংবা শুধু এ মসজদি দেখতেই যাওয়া যায় অষ্টগ্রাম এ। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানা সদরে অবস্থিত পাচ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ টি বাংলার সুলতানী ও মোগল স্থাপত্য বৈশিষ্টে্ নির্মিত।মসজিদের নির্মান কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।কেউ কেউ এটাকে ১৬শ শতাব্দীতে নির্মিত বললেও অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণ এটা ১৭শ শতাব্দীতে নির্মিত বলে মনে করেন।১৭শ শতাব্দীর প্রথমদিকে নির্মিত বলেই এই মসজিদটিতে সুলতানী ও মোগল স্থাপত্য বৈশিষ্টে পরিলক্ষিত হয়।বিখ্যাত দরবেশ কুতুব শাহ নামনুসারে এই মসজিদটির নাম করণ করা হয়েছে। মসজিদের পাশে এই দরবেশের কবর অবস্থিত।আয়তকার এই মসজিদটি উত্তর-দক্ষিনে ৪৬’-১১” এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২৭’-১১”। বাংলার চৌ-চালা ঘরের চেয়েও এর কার্নিশ গুলি অধিক বক্র। এর চার কোনে আট কোন বিশিষ্ট চারটি মিনার রয়েছে।বহির্গাত্রে প্যানেলিং এর কারুকার্য রয়েছে।এর পুর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর-দক্ষিনে ২টি করে ৪টি সর্বমোট ৭টি সুলতানী খিলান যুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে।পুর্ব দেয়ালে প্রবেশপথের বিপরীতে পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব রয়েছে।১৯০৯ ইং সালে সরকার মসজিদটিকে সংরক্ষিত পূরাকীর্তি হিসাবে ঘোষনা করে।
যাওয়ার উপায়
সবচে ভালো হলো ট্রেনে যাওয়া। প্রতিদিন সকাল ৭ টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগন্জের উদ্দ্যেশ্যে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পড়ুন। ভাড়া ১২০ টাকা। এছাড়া গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে বিআরটিসি বাসে করেও কুলিয়ারচর যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। যারা ভৈরব হয়ে যেতে চান তারা ভৈরব নেমে সিএনজিতে করে কুলিয়ারচর যাবেন। শেয়ারে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। কুলিয়ারচর নেমে একটা রিক্সা নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬ টা, ৮ টা, ৯ টা, ১১ টা এমনি করে ৩ টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় অষ্টগ্রাম। ভাড়া ১০০ টাকা। সময় লাগবে সাড়ে ৩ ঘন্টা। আসার সময় বাজিতপুর হয়ে আসতে পারেন। বিআরটিসির এসি বাস পাবেন সারাদিন। ভাড়া ১৮০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
প্রথম ও প্রধান জায়গা হলো জেলা পরিষদ ডাক বাংলো। ভাড়া ৩০০-১৫০০ টাকা (রুম ভেদে) । কেয়ারটেকার রন্জন ভাইয়ের সাথে আগে যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে রাখবেন। রান্নার ব্যবস্থাও উনি করবেন। ওনার ফোন নম্বর : ০১৭১-০২৯১২২৫ / ০১৯১৪-৯৭৫৩৮৯
এছাড়া বাজারে দুটি সাধারণ মানের হোটেল আছে ভাড়া ১০০-২০০ টাকা। অথবা নিজেরা টেন্ট নিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন।
কোথায় খাবেন
খেতে পারেন হাওরের তাজা মাছ। নিজেরা রান্না করতে চাইলে সকাল সকাল স্থানীয় বাজার থেকে কিনে নিয়ে রান্না করতে পারেন। স্থানীয় হোটেলেও মাছের বিভিন্ন পদের তরকারি পাওয়া যায়। সদ্য হাওর থেকে ধরে আনা বাহারি মাছ খেতে ভুলবেন না। অষ্টগ্রামে বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা পনির পাওয়া যায় তবে এর জন্য আপনাকে এক দিন আগে স্থানীয় পনীর বিক্রেতাদের পরিমাণ জানাতে হবে। সেই সাথে অষ্টগ্রামের বিখ্যাত ৭ ইঞ্চি লম্বা মুরালির স্বাদ নিয়ে দেখতে পারেন।
সতর্কতা
ক্যাম্পিং করার ক্ষেত্রে অষ্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ অষ্টগ্রাম বাজারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। ১৫ বা এর বেশী মানুষ গেলে হয়তো স্থানীয় থানায় ওসির কাছে রিপোর্ট করতে হতে পারে, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। যদি নৌকায় সারা রাত পার করার ইচ্ছা থাকে তবে যথাযম্ভব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন, স্থানীয় কেউ সাথে থাকলে ভাল হয়।
✺ আপনার যাত্রা শুভ আর নিরাপদ হোক- ✺ আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ
আরও পড়ুনঃ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম